আপনিকি বারবার সেনাবাহিনীর সৈনিকের চুড়ান্ত মেডিকেলে আউট হয়ে যাচ্ছেন?
আর আপনাকে সৈনিক চুড়ান্ত মেডিকেল এ বাদ পড়তে হবেনা। আপনার স্বপ্ন এবার পুরন হবেই। আজকের ব্লগটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারন আজকে এমন ১০ টি কাজের কথা বলবো, যে কাজগুলো যদি সঠিকভাবে পালন করেন তাহলে আপনার সেনাবাহিনীর চুড়ান্ত মেডিকেলে উত্তীর্ণ হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ৯৫%।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগদান প্রতিটি তরুনের স্বপ্ন। আপনারা যারা সৈনিক পদে আবেদন করেছেন,এবং লিখিত ও ভাইভার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন আপনাদের জন্য শুভকামনা। কিন্তু সবচেয়ে কঠিন হলো চূড়ান্ত মেডিকেল পরীক্ষা। এই ধাপটিই নির্ধারণ করে দেবে আপনি স্বপ্নের ইউনিফর্মটি পরতে পারবেন কিনা।
অনেক যোগ্য প্রার্থীও কিন্তু সেনাবাহিনীর চূড়ান্ত মেডিকেলে এসে বাদ পড়ে যান কিছু ভুলের কারণে বা সঠিক প্রস্তুতির অভাবে। আজকে আমরা আলোচনা করবো সেই ১০ টি অপরিহার্য কাজ নিয়ে, যা আপনাকে সেনাবাহিনীর চূড়ান্ত মেডিকেলে আত্মবিশ্বাসের সাথে উত্তীর্ণ হতে সাহায্য করবে। সুতরাং, আপনি যদি সিরিয়াসলি সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে চান, তাহলে আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
সেনাবাহিনীর সৈনিক চুড়ান্ত মেডিকেল কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?
প্রাথমিক মেডিকেল আর চূড়ান্ত মেডিকেলের মধ্যে পার্থক্য আছে। চূড়ান্ত মেডিকেলে প্রতিটি বিষয় আরও গভীরভাবে এবং খুঁটিয়ে দেখা হয়। এখানে নিশ্চিত করা হয় যে, আপনি দীর্ঘমেয়াদী এবং কঠোর প্রশিক্ষণের জন্য শারীরিকভাবে সম্পূর্ণ উপযুক্ত এবং আপনার এমন কোনো রোগ বা সমস্যা নেই যা ভবিষ্যতে আপনার জীবনের জন্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। এটি আপনার শারীরিক সক্ষমতার ফাইনাল ক্লিয়ারেন্স। তাই এখানে কোনো অবহেলার সুযোগ নেই।
সেনাবাহিনীর সৈনিক চুড়ান্ত মেডিকেল এ টিকতে হলে যে ১০ টি কাজ করতে হবে।
প্রি মেডিকেল চেকআপ
মাঠে যাওয়ার পুর্বে ডাক্তারের কাছে গিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ মেডিকেল চেক-আপ করিয়ে নিন। ঠিক যেমনটি আর্মিতে করা হয়। চোখ, কান, নাক, গলা, দাঁত, হার্ট, ফুসফুস, রক্তচাপ, ইউরিন টেস্ট, এক্স-রে বুকের, ওজন, উচ্চতা, স্কিন, হাড়ের গঠন যেমন নকনি, ফ্ল্যাট ফুট, ভেরিকোস ভেইন, হাইড্রোসিল, হার্নিয়া ইত্যাদি।
এখন প্রশ্ন আসতে পারে, আমি গ্রামে থাকি বা আমার দ্বারা এতো কিছু পরীক্ষা করা সম্ভব না। চিন্তা নাই আপনার জন্যও রয়েছে সমাধান।
আমাদের ডিফেন্স মেডিকেল সিলেকশন গাইড পিডিএফ ইবুকের মধ্যে রয়েছে সকল শারীরিক সমস্যা ও তার সমাধান। যার মাধ্যমে আপনি চুড়ান্ত মেডিকেলের জন্য নিজেকে ঘরে বসেই সেভাবে প্রস্তুত করতে পারবেন। মাএ ১০০ টাকায় আপনারা পিডিএফটি সংগ্রহ করে নিয়ে আপনার সকল কনফিউশান দুর করুন।
এতে আপনার কোনো অজানা সমস্যা থাকলে তা আগেভাগেই ধরা পড়বে এবং সমাধানের জন্য কিছুটা সময় পাবেন। কোনো সমস্যা না থাকলে আপনার আত্মবিশ্বাস বেড়ে যাবে।
নিতে সরাসরি (০১৮৩২৪১৭৪৬৩) ওয়্যাটসআপে মেসেজ করুন অথবা এখানে ক্লিক করুন
পুর্ব-শনাক্ত রোগের চিকিৎসা
প্রি-মেডিকেল বা আগে থেকেই যদি আপনার কোনো সমস্যা যেমন: দাঁতে পোকা, চোখে পাওয়ারের সমস্যা, কানের ময়লা, ছোটখাটো চর্মরোগ, হার্নিয়া বা হাইড্রোসিল ধরা পরে, তাহলে চূড়ান্ত মেডিকেলের আগেই সেগুলোর সঠিক চিকিৎসা করিয়ে নিন।
ছোটখাটো সমস্যাও সেনাবহিনীর চূড়ান্ত মেডিকেলে বাদ পড়ার কারণ হতে পারে। আগে থেকে সমাধান করা থাকলে আপনি নিশ্চিন্ত থাকতে পারবেন। গুরুতর সমস্যা থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
চোখ এবং কানের বিশেষ যত্ন নিন:
আপনার দৃষ্টিশক্তি চশমা ছাড়া ও প্রয়োজন হলে চশমা সহ এবং শ্রবণশক্তি নির্ধারিত মানের মধ্যে আছে কিনা তা নিশ্চিত করুন। কানে যেন কোনো ওয়াক্স বা ময়লা জমে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখুন। চূড়ান্ত মেডিকেলের আগে উচ্চ শব্দ এড়িয়ে চলুন।
এই দুটি সেন্সরি অর্গান সেনাবাহিনীর কাজের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ । এখানে সামান্য সমস্যা থাকলেও আপনাকে সেনাবাহিনীর চুড়ান্ত মেডিকেলে বাদ দিয়ে দিবে।
দাঁত ও মুখের সম্পূর্ণ যত্ন নিন:
কোনো ক্যাভিটি, ভাঙা দাঁত বা মাড়ির রোগ থাকলে ডেন্টিস্টের কাছে গিয়ে চিকিৎসা করান। মুখ পরিষ্কার রাখুন। মাঠে যাওয়ার দিন অবশ্যই ভালোভাবে ব্রাশ করে যাবেন।
মুখের স্বাস্থ্য সামগ্রিক স্বাস্থ্যের নির্দেশক। অপরিষ্কার মুখ বা দাঁতের গুরুতর সমস্যা নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাই দাঁত খুবই গুরুত্বসহকারে চুড়ান্ত মেডিকেলে দেখা হয়। সমস্যা থাকলে দ্রুত একজন ডেন্টিস ডক্টর দেখান।
BMI অনুযায়ী ওজনকে নিয়ন্ত্রণে রাখুন:
আপনার উচ্চতা অনুযায়ী নির্ধারিত ওজন আছে কিনা তা বিএমআই (BMI) দেখে নিশ্চিত করুন । ওজন বেশি বা কম থাকলে তা সঠিক ডায়েট ও ব্যায়ামের মাধ্যমে ওজনকে নিয়ন্ত্রণ করুন। আমাদের ডিফেন্স মেডিকেল সিলেকশন গাইড ইবুকটির মধ্যে বিএমআই অনুযায়ী কিভাবে ওজন নিয়ন্ত্রণ করবেন তার বিস্তারিত দেওয়া আছে।
কারন, ওজন একটি গুরুত্বপূর্ণ ফিটনেস প্যারামিটার। চূড়ান্ত মেডিকেলে ওজন কম বেশি হলে বাদ পড়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
ত্বক ও ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা:
ত্বক পরিষ্কার রাখুন। কোনো সংক্রামক বা গুরুতর চর্মরোগ যেমন দাউদ,একজিমা,সোরিয়াসিস থাকলে তার চিকিৎসা করান। মাঠের দিন পরিষ্কার ও মার্জিত পোশাক পরুন। নখ ছোট রাখুন। ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন।
পরিচ্ছন্নতা সুস্বাস্থ্যের লক্ষণ। সংক্রামক চর্মরোগ থাকলে আপনি বাদ পড়ে যাবেন । আপনার পরিচ্ছন্নতা সারদের কাছে ভালো ইম্প্রেশন তৈরি করবে। তাই এখন থেকেই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকার চেষ্টা করুন।
প্রয়োজনীয় সকল ডকুমেন্ট প্রস্তুত রাখা:
চূড়ান্ত মেডিকেলের জন্য যেসব কাগজপত্র, এডমিট কার্ড, পূর্ববর্তী মেডিকেলের রিপোর্ট যেমন চশমার প্রেসক্রিপশন যদি থাকে নিয়ে যেতে হবে, জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্মসনদ ইত্যাদিও প্রয়োজন হবে, সেগুলোর মূলকপি ও ফটোকপি গুছিয়ে ফাইলে রাখুন।
ডকুমেন্টেশনে কোনো ভুল থাকলে মেডিকেল প্রক্রিয়ায় জটিলতা দেখা দিতে পারে, এরকম হলে বাদ পরে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই আপনার যদি কোনো শারীরিক সমস্যার মেডিকেল সার্টিফিকেট থেকে থাকে বা চিকিৎসা অথবা অপারেশন করেছেন,এমন হলে অবশ্যই সেটার ডকুমেন্টস নিয়ে যেতে হবে।
পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম:
মাঠে যাওয়ার কিছুদিন আগে থেকে রাতে পর্যাপ্ত ঘুমানোর চেষ্টা করুন, কমপক্ষে ৭-৮ ঘন্টা। দুশ্চিন্তা বা অতিরিক্ত উত্তেজনা পরিহার করুন। শরীর ও মনকে বিশ্রাম দিন।
ঘুম ঠিক না হলে রক্তচাপ বা হার্ট রেট অস্বাভাবিক দেখাতে পারে। এতে চুড়ান্ত মেডিকেলে বাদ পড়ে যাবেন।
ঝুঁকি ও বিপদজনক কাজ থেকে দুরে থাকুন:
মাঠে যাওয়ার ঠিক আগে এমন কোনো কাজ যেমন: ঝুঁকিপূর্ণ খেলাধুলা, অতিরিক্ত পরিশ্রম করবেন না যাতে আঘাত লাগার বা অসুস্থ হয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। কোনো প্রকার নেশাজাতীয় দ্রব্য বা অপ্রয়োজনীয় ঔষধ গ্রহণ থেকে বিরত থাকুন। ধুমপান পরিহার করুন ।
শেষ মুহূর্তে একটি ছোট আঘাত বা অসুস্থতাও আপনার স্বপ্ন ভেঙে দিতে পারে। ডোপ টেস্টে পজিটিভ এলে সরাসরি বাদ পড়বেন।
মানসিক স্থিরতা ও সততা বজায় রাখুন:
মেডিকেলের সময় শান্ত ও স্বাভাবিক থাকুন। সারদের সকল প্রশ্নের উত্তর সততা ও আত্মবিশ্বাসের সাথে দিবেন। কোনো তথ্য গোপন করার চেষ্টা করবেন না। নার্ভাস না হয়ে স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস নিবেন।
অতিরিক্ত টেনশন আপনার ব্লাড প্রেসার বা পালস রেট বাড়িয়ে দিতে পারে।আপনার সততা সারদের কাছে আপনার ইতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি করবে। গোপন তথ্য পরে প্রকাশ পেলে চাকুরি হয়ে গেলেও আপনাকে বাদ দিয়ে দিবে।
এছাড়াও কিছু বিষয় মনে রাখবেন। যেমন মাঠে যাওয়ার আগে হালকা ও সহজে হজম হয় এমন খাবার খাবেন। হতে পারে একটি ডিম সিদ্ধ, দুটি কলা যেটা খেলে আপনি এনার্জি পাবেন। পর্যাপ্ত পানি পান করবেন।
মাঠে সারদের সাথে বিনয়ী ও শ্রদ্ধাশীল আচরণ করবেন।
তাদের সকল নির্দেশনা মনোযোগ দিয়ে শুনে সেভাবে পালন করবেন।
উপসংহার :
চূড়ান্ত মেডিকেল পরীক্ষা নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ, কিন্তু সঠিক প্রস্তুতি ও আত্মবিশ্বাস থাকলে এখানে উত্তীর্ণ হওয়া কঠিন নয়। আমরা যে ১০টি কাজের কথা বললাম, সেগুলো মনোযোগ দিয়ে অনুসরণ করলে আপনার সফল হওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশে বেড়ে যাবে। মনে রাখবেন, আপনার সততা, শৃঙ্খলা এবং প্রস্তুতিই আপনার সবচেয়ে বড় শক্তি।
আপনার স্বপ্নের পথচলা সফল হোক। সেনাবাহিনী,নৌবাহিনী, বিমানবাহিনীসহ সকল বাহিনীর লিখিত,ভাইভা ও চুড়ান্ত মেডিকেলের সেরা প্রস্তুতি নিতে আমাদের ইউটিউব চ্যানেল (Nuri Defence TV) টি সাবস্ক্রাইব করে রাখুন।
ধন্যবাদ।